ইরান কেন যুদ্ধে হারবে না?
১. ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা
-
ইরান একটি পাহাড়-পর্বতে ঘেরা দেশ। এর ভূপ্রকৃতি বহিরাগতদের জন্য আক্রমণাত্মক যুদ্ধকে কঠিন করে তোলে।
-
পারস্য উপসাগর ও হরমুজ প্রণালীর নিয়ন্ত্রণে থাকার ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কৌশলগত প্রভাব রাখে।
২. প্রতিরোধভিত্তিক সামরিক কৌশল
-
ইরানের যুদ্ধনীতির ভিত্তি ‘অসামান্য প্রতিরোধ’ (asymmetric warfare)। তারা মূলত শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে ক্লান্ত করে তুলতে এবং দীর্ঘমেয়াদে ক্ষয়ক্ষতি ঘটাতে প্রস্তুত।
-
ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র, গেরিলা কৌশল, সাইবার যুদ্ধ এবং অঞ্চলভিত্তিক মিত্র (যেমন হিজবুল্লাহ, হুথি, পিএমইউ ইত্যাদি) ব্যবহার করে তারা যুদ্ধকে ছড়িয়ে দিতে পারে।
৩. আদর্শিক ও জাতীয়তাবাদী চেতনা
-
ইরানি জনগণ দীর্ঘদিন ধরে বিপ্লব ও যুদ্ধের মধ্যে বেড়ে উঠেছে (যেমন: ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লব, ইরান-ইরাক যুদ্ধ)। তাই তারা যুদ্ধের ভয় পায় না, বরং অনেকেই এটিকে আত্মত্যাগের অংশ হিসেবে দেখে।
-
"শহীদ" ধারণা, আত্মোৎসর্গ এবং ইসলামী বিপ্লবের আদর্শ তাদের মনোবলকে শক্তিশালী করে।
৪. আঞ্চলিক প্রভাব ও মিত্রজোট
-
ইরানের প্রভাবশালী ‘প্রক্সি নেটওয়ার্ক’ আছে: হিজবুল্লাহ (লেবানন), হুথি (ইয়েমেন), শিয়া মিলিশিয়া (ইরাক, সিরিয়া)।
-
যেকোনো বড় সংঘাতে এই দলগুলো সক্রিয়ভাবে ইরানের পক্ষে যুদ্ধ করতে পারে, যুদ্ধক্ষেত্রকে বহুবিস্তৃত করে তোলে।
৫. আত্মঘাতী প্রতিক্রিয়ার ভয়
-
ইরানের ওপর সরাসরি বড় ধরনের সামরিক হামলা ঘটলে হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে, যা বিশ্বব্যাপী তেলের বাজারে ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে।
-
তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে ইউরোপ, চীন, এমনকি আমেরিকার অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
৬. প্রতিরক্ষা সক্ষমতা ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি
-
ইরান নিজস্ব প্রযুক্তিতে স্বল্প থেকে মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনে সক্ষম।
-
এসব ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পাশ্ববর্তী মার্কিন ঘাঁটি, ইসরায়েল ও উপসাগরীয় দেশগুলোতে হামলা চালানো সম্ভব।
৭. আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও যুদ্ধের সীমাবদ্ধতা
-
বড় পরাশক্তিগুলো (যেমন চীন, রাশিয়া) ইরানকে একেবারে ধ্বংস হতে দেবে না।
-
পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যেও যুদ্ধ নিয়ে দ্বিধা আছে; কারণ একদিকে তারা ইরানকে চাপ দিতে চায়, আবার যুদ্ধ চাই না অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক ভারসাম্যের কারণে।
Post a Comment